মিস ইংল্যান্ড যখন ডাক্তার

কলকাতায় জন্ম নিয়েছেন ভাষা মুখার্জী (২৪)। ৯ বছর বয়সে পাড়ি জমিয়েছেন বৃটেনে। এখন তিনি একজন ডাক্তার। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরো একটি খেতাব। তিনি ২০১৯ সালের মিস ইংল্যান্ড। সেই সুবাদে তিনি বৃটেনের বাইরে বিভিন্ন দেশে দাতব্য সংস্থায় কাজ করেন শুভেচ্ছাদূত হিসেবে। কিন্তু দেশের মানুষ যখন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখন তিনি তার সেই কাজকে ফেলে ফিরে গিয়েছেন বৃটেনে। সেখানে মানুষের জন্য সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

তার সহকর্মীরা মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য লড়ছেন। তিনিও তাদের সঙ্গে হাত লাগাবেন কোয়ারেন্টিন শেষে। তাকে নিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছে অনলাইন সিএনএন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর একজন জুনিয়র ডাক্তারের ক্যারিয়ার থেকে ব্রেক বা ছুটি নেন ভাষা মুখার্জী। মিস ইংল্যান্ড বিজয়ী হওয়ার পর তিনি ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করতে থাকেন। তাকে বেশ কিছু দাতব্য সংস্থা তাদের দূত বানানোর আমন্ত্রণ জানায়। ভাষা মুখার্জী পরিকল্পনা করেন আপাতত তার স্টেথোস্কোপ গলা থেকে নামিয়ে রাখবেন এবং এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত মানবিক কাজে মনোনিবেশ করবেন।

ভাষা মুখার্জী বলেন, আমাকে আফ্রিকা, তুরস্ক, তারপরে ভারতে, পাকিস্তানে এবং এশিয়ার কয়েকটি দেশে সেবামুলক কাজের জন্য শুভেচ্ছাদূত হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়।

মার্চের শুরুর দিকে ২৪ বছর বয়সী ভাষা মুখার্জী কভেন্ট্রি মারসিয়া লায়ন্স ক্লাবের পক্ষে চার সপ্তাহের জন্য ছিলেন ভারতে। ওই লায়ন্স ক্লাবটি হলো উন্নয়ন এবং লোকজনের সেবামুলক একটি সংগঠন। এর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছিলেন ভাষা। বিভিন্ন উপহার সামগ্রী নিয়ে তিনি একের পর এক স্কুলে যেতে থাকেন। পরিত্যক্ত বালিকাদের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে অর্থ দেন। কিন্তু বৃটেনে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপের দিকে যেতে থাকে। তিনি পূর্ব লন্ডনের বস্টনে পিলগ্রিম হাসপাতালে কাজ করতেন। এ সময় সেখানে তার সাবেক সহকর্মীরা তাকে এসএমএসে বার্তা পাঠাতে থাকেন। তারা জানাতে থাকেন সেখানকার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।

ওই তথ্য পাওয়ার পর তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের কাছে জানতে চান, কাজে যোগ দিতে পারবেন কিনা। ভাষা মুখার্জী বলেন, এ সময়টা আমার কাছে মিস ইংল্যান্ড মুকুটটা পড়ে থাকা, ওইসব মানবিক কাজ করে বেড়ানোটা ভুল সিদ্ধান্ত মনে হতে লাগলো, যখন সারা বিশ্বে এত এত মানুষ করোনা ভাইরাসে মারা যাচ্ছেন। আর তার সহকর্মীরা আক্রান্তদের বাঁচাতে প্রাণপণ লড়াই করছেন। ভাষা বলেন, আমি দেশে ফিরতে চাই। ডাক্তার হিসেবে সোজা কাজে যোগ দিতে চাই।

৯ বছর বয়সে কলকাতা থেকে ইংলিশ সিটি ডার্বিতে ছুটে যান ভাষা মুখার্জী। বলেন, সারা বিশে^র মানুষ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমি তো জানি একজন ডাক্তার হয়ে কিভাবে তাদেরকে সেবা দিতে হয়। তাই কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

বুধবার তিনি বৃটেনে ফিরেছেন। তার ভাষায়, মিস ইংল্যান্ড হিসেবে সময় কাটানো আমার কাছে উত্তম মনে হয় নি। এ সময়টা হলো ইংল্যান্ডকে সাহায্য করার। তিনি বৃটেনে ফিরেছেন। এক থেকে দু’সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকার পর তিনি পিলগ্রিম হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে পারবেন। তিনি শ্বাসতন্ত্রের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।