সমাবেশের অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বাহিনীগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা
বিশ্বজুড়ে মানুষের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকারকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। এটা মানুষের সর্বজনীন অধিকার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি সমানভাবে প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। এ সময়ে উঠে আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কাছে প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকদের নিকট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন যে প্রশ্নের তালিকা পাঠিয়েছেন সে বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নেড প্রাইস বলেন, আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখা, শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা, শরণার্থীদের সুরক্ষা শক্তিশালী করার জন্য আহ্বান জানাই। ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ অংশ হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: নেড, আপনাকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশ ইস্যুতে প্রশ্ন। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করার জন্য বাংলাদেশি মিডিয়ার সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন প্রশ্নের লিস্ট দিয়েছেন। খোলা বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক লাখ নাগরিক নিখোঁজ হন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের শিকারে পরিণত হন- কারণ, নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা হাজারের বেশি নাগরিককে হত্যা করেন।
তাদের বেশির ভাগই আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান ও হিস্প্যানিক।
তিনি আরও বলেছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা নেই। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার মিডিয়া আরটি টিভি বন্ধ করে দেয়ার সমালোচনা করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও মিডিয়ার স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দেয়- বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ বক্তব্য দেয়ার একদিন পরেই এই বিবৃতি প্রচার করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি আরও বলেছেন, তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য সম্পর্কে আপনি কি বলবেন? বাংলাদেশ নিয়ে আমার আরও একটি প্রশ্ন আছে।
নেড প্রাইস: ভালো কথা। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব আছে। এর অংশ হিসেবে বেশকিছু ইস্যুতে, অভিন্ন স্বার্থবিষয়ক কিছু ইস্যু তুলে ধরার এবং একই সঙ্গে উদ্বেগ তুলে ধরার মতো অবস্থানে আছি আমরা। আমরা নিয়মিতভাবে মানবাধিকারের ইস্যুগুলো তুলে ধরি বাংলাদেশ সরকারের কাছে। এটা আমরা প্রকাশ্যে করি, যেমনটা আগেও করেছি। আবার এটা আমরা প্রাইভেটলিও করি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শাক্তিশালী করার আহ্বান জানাই আমরা। আরও আহ্বান জানাই আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা শক্তিশালী করতে। আমরা আহ্বান জানাই শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা, একই সঙ্গে শরণার্থীদের সুরক্ষা শক্তিশালী করতে। এসব অধিকারকে শক্তিশালী করতে এবং তা সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তাদেরকে আমরা কমপক্ষে ৮০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছি। শুধু ২০২১ সালে খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নে কমপক্ষে ৩০ কোটি ডলার দিয়েছে ইউএসএইড। একই সঙ্গে গণতন্ত্রকে সমুন্নত করা এবং সুশাসন এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অন্তর্ভুক্ত পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্র। ফলে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ নিয়ে আরও একটি প্রশ্ন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমপ্রতি যে মন্তব্য করেছেন, তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ব্যবহার করেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। যাতে তাদেরকে শাস্তি দেয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাকে এভাবে শাস্তি দিতে হবে। তিনি চান তাদেরকে পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেয়া হোক। দেখুন, তিনি প্রকাশ্যে একথা বলেছেন এবং দেশজুড়ে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ এসব বিক্ষোভকারীদের ওপর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল হামলা করছে। এ বক্তব্যের বিষয়ে কি বলবেন?
নেড প্রাইস: সারা বিশ্বে আমরা যেমনটা করি, আমাদের প্রতিশ্রæতি হলো সভা সমাবেশের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, যেকোনো দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভের অধিকারের প্রতি। এটা সর্বজনীন অধিকার। তা বাংলাদেশের জনগণের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, যেমনটা সারা বিশ্বে প্রযোজ্য। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, আমরা নিরাপত্তা সার্ভিস, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী, নাগরিক ফোর্সের প্রতি আহ্বান জানাই এসব অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে। আমরা আহ্বান জানাই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দিতে, যাতে তাদের বক্তব্য শোনা যায়।