যুক্তরাষ্ট্রে দ্রব্যমূল্য ব্যাপক ঊর্ধ্বমুখী
বাংলাদেশী ডেস্ক : যুক্তরাষ্টে ব্যাপকভাবে বেড়েছে দ্রব্যমূল্যের দাম। গত ৪০ বছরের তুলনায় বেড়েছে ব্যাংকে সুদের হার। কমতে শুরু করেছে জ্বালানির দাম। এছাড়া বিশ্বজুড়ে বাড়ির মূল্য ও ভাড়া বিলাস সামগ্যার মতো মহার্ঘ ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও এর প্রভাব পড়েছে দারুণভাবে। অধিকাংশ মানুষ, বিশেষ করে যারা ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই তাদের পরিবারের যৌথ আয় থেকে বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত অর্ধ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির মূল্য বেড়েছে ১১৮ শতাংশ, কিন্তু ১৯৮৫ থেকে ২০২০ সালের বড় সিটিগুলোতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ১৪৯ শতাংশ। এই সময়ে মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। অতএব বলা যায়, বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করা নির্দিষ্ট আয়ের লোকদের আর সাধ্যের মধ্যে নেই। তবে আবাসন নিয়ে গবেষণা করে যেসব প্রতিষ্ঠান, তাদের প্রায় অভিন্ন মত যে বাড়ির মূল্য ও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির পেছনে যেসব ফ্যাক্টর অত্যন্ত সক্রিয়, তার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাড়ি ক্রয় করাকে ক্রমবর্ধমানভাবে “বিনিয়োগ” হিসেবে বিবেচনা করা। যে কারও জীবদ্দশায় তারা বাড়ি ক্রয় করাকে সাধারণত নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে দেখে অভ্যস্ত, এবং অর্থনীতিবিদরাও আবাসন খাতকে তুলনামূলকভাবে ‘নিরাপদ’ সম্পদের শ্রেনিতে ফেলেন, যা যথাসম্ভব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বেড়ে যায়। এর ফলে মানুষের কল্পনা স্ফীত হয়ে ওঠে, বাড়ির মালিক হতে আগ্রহীরা অতিরিক্ত ঋণ নেয়ার জন্য বাজারে প্রবেশ করেন, বাড়ি খোঁজা শুরু করেন এবং বাড়ি কিনে ভাড়া দিয়ে দেন।
বাড়ির মূল্য ও ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একক বিনিয়োগকারী যেভাবে ভূমিকা রাখে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনোয়াগকারী, অর্থ্যাৎ হাউজিং কোম্পানিগুলো কাঠামোগতভাবে একই ভূমিকা পালন করে, তবে তাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো, যারা বসবাসের জন্য বাড়ি কিনতে চায়, হাউজিং কোম্পানিগুলো তাদের কাছে বাড়ি বিক্রয় করতে চায় না। তারা নিজেরা ভাড়া দেয় এবং নানা ধরনের সার্ভিস, মেরামত ইত্যাদি দেখিয়ে দফায় দফায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে। তাদের ও তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এটি অত্যন্ত লোভনীয় ব্যবসা। কিন্তু এর নেতিবাচক পরিণতি সমাজকে দুর্দশার মধ্যে ফেলেছে। বাড়ি সংস্কার, উচ্ছেদ, ভাড়া বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ভাড়াটেদের রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে এবং এর ফলে সমাজে অসাম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবাসন আর মানবাধিকারের মধ্যে নেই, একসময় যা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনে রক্ষা করার গ্যারান্টি হিসেবে অন্তত উন্নত দেশগুলোতে অনুসরণ করা হতো। সবাইকে অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল বাসভবনে থাকতে হবে এমন নয়, কিন্তু সমাজে এমন অবস্থা থাকতে হবে, যাতে প্রত্যেকে বসবাসযোগ্য বাড়ির নিশ্চয়তা লাভ করে।
নিউইয়র্ক সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র আবাসন খাতে ব্যয় এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে ইতোমধ্যে বহু আমেরিকান হোমলেসে পরিণত হয়েছে এবং আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ হোমলেস হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছে। যুক্তরাষ্ট্রে এত হোমলেসকে স্থান দেওয়ার মত হোমলেস শেল্টার সেন্টার নেই। ওয়াশিংটন পোস্ট ১৫টি স্টেটের বেশকিছু হোমলেস সেন্টারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন যে শেল্টাগুলোতে হোমলেস মানুষের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক জায়গায় কয়েক মাসের মধ্যে ওয়েটিং লিস্টে থাকা হোমলেসের সংখ্যা সেন্টারগুলোর ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ অথবা তিনগুণ। ন্যাশনাল এলায়েন্স টু এন্ড হোমলেসনেসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সালে ৫৮০,০০০ এর বেশি মানুষ হোমলেস হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি ২০২০ চেয়ে অনেক বেশি নাজুক। ফলে বহু আমেরিকান পরিবার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জীবন গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হচ্ছে না মুদ্রাস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাওয়ায়। প্রতিটি ভোগ্য পন্যের মূল্য বেড়েছে, গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ এবং অর্থনীতিবিদরাও পূর্বাভাস দিতে পারছেন না যে মুদ্রাস্ফীতির লাগাম কবে টেনে ধরা যাবে।
অনেকে বলছেন, সরকার কোনো প্রনোদনা বা স্টিমুলাস না দিলে যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ ঠেকানো সম্ভব হবে না। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মেরেডিথ গ্রিফ বলেছেন, “আমরা এক জটিল অবস্থার মধ্যে আছি, গ্যাস-খাদ্যদ্রব্য ও বাড়ি ভাড়ার আকারে জীবনযাত্রার ব্যয় এত দ্রæত বেড়ে যাচ্ছে যে অধিকাংশ মানুষ তাদের সাধ্যের মধ্যে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে না। যেদিকে তাকানো যায় মূল্য বাড়ছে, কিন্তু বেতন বাড়ছে না।”গবেষকদের মতে আগে হোমলেস হওয়ার কারণগুলোর অধিকাংশ ছিল চাকুরিচ্যুতি, কল্পনাতীত চিকিৎসা ব্যয় ইত্যাদি, কিন্তু এখন হোমলেস হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বাড়ি ভাড়া দিতে না পারা। সেন্সাস ব্যুরোর হাউজহোল্ড পালস সর্ভের গত মাসের প্রথম দিকের পরিসংখ্যানে আনুমানিক ১ কোটি ৩৭ লাখ আমেরিকান ভাড়া অথবা মর্টগেজ পরিশোধে পিছিয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ৪৬ লাখ বয়স্ক আমেরিকান বলছেন যে আগামী দুই মাসের মধ্যে হয় তাদেরকে উচ্ছেদ হতে হবে, অথবা বাড়ি ফোরক্লোজারে চলে যাবে। ইউএস গভর্নমেন্ট একাউন্টেবিলিটি অফিসের হিসাব অনুযায়ী অবস্থা এমন এক পর্যায়ে পৌছে গেছে যে কারও বাড়ি ভাড়া ১০০ ডলার বৃদ্ধি পেলে হোমলেস সংখ্যা ৯ শতাংশ বৃদ্ধির আশ্কংা সৃষ্টি হয়।