জটিল সমীকরণের দিকে যাচ্ছে দেশ

বিএনপি বলছে, গুম-খুনের রাজনীতি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের সুনাম নষ্ট করেছে আওয়ামী লীগ। জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এসব বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্র। অন্যদিকে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা’ ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের নতুন কৌশল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের রাজনীতিতে তিন দলের অবস্থান তিনটি মেরুতে। এমন অবস্থায় বলে দিচ্ছে কতটা জটিল সমীকরণের দিকে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি।

স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় এসে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের সুপারিশ অর্জন করা বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ধারায় এগিয়েছে, রাজনীতি কি তেমনটা এগোতে পেরেছে? নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দেশের দলগুলো এখনও ঐকমত্যে আসতে পারেনি। এক টেবিলে বসতেই নারাজ দেশের বড় দুটি দল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নির্দলীয় সরকার না আসলে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন কমিশন কী করল না করল সেটি বিষয় না। কারা নির্বাচনটা পরিচালনা করল সেটি হলো বিষয়। যারা দিনের ভোট রাতে করেছিল, সেসব কর্মকর্তারাই তো রয়ে গেছে। বরং তারা পদোন্নতি পেয়ে সচিব পর্যায়ে চলে গেছে। সেসব লোকজন থাকতে একটা কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আশ্রয় তারা নিয়েছে। বিএনপিকে কানাডার আদালতে সন্ত্রাসী দল বলে ঘোষণা করেছে। বিএনপির বর্তমান ভারপাপ্ত সভাপতি তারেক জিয়াকে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ভিসা দেয়নি।

সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ব্যাপক উন্নয়নের দাবি করা হলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র চর্চা ও সুশাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে সমালোচনাও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, বলছেন এ দুই নেতা।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে খুবই জটিল শুধু নয়, একটা সংকটজনক অবস্থায় পতিত। প্রথমত রাজনীতি এখন রাজনীতির বাইরে চলে গেছে। এখন প্রধানত সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে সরকার ক্ষমতায় স্থায়ীভাবে থাকা যায় কি না, সেটার আয়োজন বিভিন্ন পর্যায়ে তারা করে রেখেছে।

বিএনপি নেতা টুকু বলেন, আমাদের লোকজনকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমার নেতাদের নয়, ভাই-বোন-বাবাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এই মাত্রার নিপীড়ন পাকিস্তান আমলে করা হয়নি আমাদের সঙ্গে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের ডাক না পাওয়া এবং পুলিশ প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি দেশের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

সিপিবি নেতা সেলিম বলেন, আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাতে হাত ধরে ক্ষমতা চালাচ্ছে। কোনো একটা জায়গায় হয়তো সমস্যা হয়েছে, একে অন্যকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটার সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই।

টুকু বলেন, নির্বাচনকে ধ্বংস করে দিয়ে আজকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে রেজিম তৈরি করা হয়েছে। কোনো গণতন্ত্র নেই। আজকে আমেরিকার মতো দেশ আমাদের একটা প্রতিষ্ঠানকে ব্যানড করেছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ কলঙ্ক জাতির জন্য না, এ কলঙ্ক সরকারের।

আওয়ামী লিগ নেতা ফারুক খান বলেন, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে আমাদের দেশের উন্নয়ন, আমাদের দেশের রাজনীতি, আগামী নির্বাচনের খুব একটা সম্পর্ক নেই। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সাতদিন পরে তারাই আবার বলছে- বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ কমেছে। সুতরাং, এদের কথা বেশি বিশ্বাস করে চললে আমাদের দেশের গণতন্ত্র ব্যাহত হবে, উন্নয়ন ব্যাহত হবে।

রাজনৈতিক এমন সংস্কৃতির মধ্যেই দেশ পার করল অর্ধশত বছর। অনেকে বলছেন, সামনের দিনগুলোতে দেশের রাজনীতির জন্য আরও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে, দল-মত নির্বিশেষে সবাই দেশের জন্য কাজ করবে-এমন প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।