করোনার ভ্যাকসিন ট্রায়াল বন্ধ করল জনসন অ্যান্ড জনসন

মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। টিকা নেয়ার পর এক স্বেচ্ছাসেবকের অসুস্থতা দেখা দেয়ায় ঝুঁকি না নিয়ে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার জনসন অ্যান্ড জনসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের চূড়ান্ত ধাপের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধ করা হয়েছে। কারণ তাদের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটি নেয়ার পর একজনের অসুস্থতা দেখা গেছে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমাদের নীতিমালা অনুসরণ করে স্বেচ্ছাসেবকের অসুস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটি মূল্যায়ন করছে স্বতন্ত্র ডেটা সেফটি মনিটরিং বোর্ড (ডিএসএমবি)। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব চিকিৎসকরাও এ তথ্য মূল্যায়ন করবেন। কারণ অনুসন্ধানের পরই ভ্যাকসিন ট্রায়াল আবার চালু করা হবে।

এর আগেই জনসন অ্যান্ড জনসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সব পরীক্ষা নীতিমালা মেনে করা হয়। এতে কোনো মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট স্ট্যাটনিউজের প্রতিবেদন বলছে, বড় ধরনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে অসুস্থতা ও দুর্ঘটনার মত গুরুতর অসুস্থতা হতেই পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চূড়ান্ত টিকা পরীক্ষায় বা তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকাটি চতুর্থ। টিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে জনসন অ্যান্ড জনসনের পরীক্ষাটি সবচেয়ে বড়। এতে ৬০ হাজারের বেশি মানুষের ওপর সমীক্ষা চলছে।

ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের জন্য সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে অংশগ্রহণকারী নিয়োগ শুরু করে জনসন অ্যান্ড জনসন। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ২০০-এর বেশি অঞ্চল থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ৬০ হাজারের মতো অংশগ্রহণকারী তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। এই ভ্যাকসিনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তহবিল দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর হেলথ।

আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, পেরু ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হচ্ছে। তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে যাওয়ার তালিকায় নাম লেখানো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের মধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিনটি বিশ্বে ১০ নম্বর, আর যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ। দ্রুতগতিতে এই ভ্যাকসিনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনসন অ্যান্ড জনসনকে ১০০ কোটির বেশি ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

এ বিষয়ে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন আশিস ঝা বলেন, বড় পরীক্ষায় এমন সাময়িক বন্ধ হওয়ার ঘটনা একাধিকবার ঘটতে পারে।

করোনার টিকা পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা। গত মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটির পরীক্ষাও বন্ধ হয়ে যায়। একজন স্বেচ্ছাসেবকের স্নায়বিক জটিলতা দেখা দেয়ার পর টিকাটির পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয়। টিকাটি ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে আবার পরীক্ষা শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে আছে।

গত বছরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে এরই মধ্যে এক লাখ ৮৫ হাজার বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের।