তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি!

ইউক্রেন ইস্যুতে যুদ্ধ হলে তাতে আক্রান্ত হবে ইউরোপ। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে পুরো ইউরোপ। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যুক্ত হয়ে এই যুদ্ধ রূপ নিতে পারে বিশ্বযুদ্ধে। এমন নানা আলোচনা। উত্তেজনা যেন টগবগ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউরোপ সফর সংক্ষিপ্ত করেছেন বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জার্মানির রাজনীতিকরা।

ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হাবিক রোববার বলেছেন, যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে ইউরোপ। আরটিএল/এনটিভি’কে তিনি বলেছেন, আমরা ইউরোপে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। অন্যদিকে চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে যদি পুতিন হামলা চালান, তবে তাকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে। যুদ্ধ পরিস্থিতি বা যুদ্ধের সময় যেমন বিভিন্ন দিক থেকে রিপোর্ট আসে, ঠিক একইভাবে প্রচুর রিপোর্ট মিডিয়ায়। শনিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি তাকে জার্মানির নেতাদের ভাষায়ই সতর্ক করেছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফের মুখপাত্র মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেছেন, সীমান্তে রাশিয়া এক লাখ ৩০ হাজার সেনা সমাবেশ করেছে। উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে আকাশসীমা এখনই বন্ধ করে দিচ্ছে না ইউক্রেন। তিনি আকাশসীমাকে বন্ধ করে দেয়া একটি বাজে কাণ্ড বলে মন্তব্য করেছেন। ডাচ্‌ বিমান সংস্থা কেএলএম শনিবার বলেছে, অবিলম্বে ইউক্রেনের উচিত ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া। এর জবাবে পোদোলিয়াক ওই মন্তব্য করেছেন। ওদিকে জার্মান বিমান সংস্থা লুফথান্সা রোববার বলেছে, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফ্লাইট স্থগিত করা হবে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, বিদেশে সপরিবারে অবকাশে যাওয়ার পর ইউক্রেন সংকটের কারণে ওই সফরকে সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, শনিবার সকালে মস্কো থেকে ফিরেছি। কারণ, ইউক্রেন পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের সময় তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব সপরিবারে ক্রিট সফরে ছিলেন। তিনি দেশে ফেরেননি। অনেকে মনে করেন এ কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়ে থাকতে পারে।

ওদিকে নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়তে যেসব দেশ পরামর্শ দিয়েছে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সাইপ্রাসের। উত্তেজনার উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাগরিকদেরকে অপ্রয়োজনে ইউক্রেন সফরে যাওয়া বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরে যাওয়ার জন্য যেসব দেশ পরামর্শ দিয়েছে তার মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, সুইডেন, জর্ডান, নেদারল্যান্ডস, কুয়েত, ইরাক, সাইপ্রাস ও ফিনল্যান্ড। ইউক্রেন সফর বাতিল করতে বা অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়তে দূতাবাসের সঙ্গে নাগরিকদের যোগাযোগ করতে পরামর্শ দিয়েছে সৌদি আরব। ইউক্রেন সফর বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, স্লোভাকিয়া ও পোল্যান্ড। কিয়েভে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানিয়েছে গ্রিস। ইউক্রেনের পরিস্থিতি বুঝে চলার পরামর্শ দিয়েছে লিথুয়ানিয়া। নিবিড় নজরদারির পরামর্শ দিয়েছে চীন। তবে ইউক্রেন ত্যাগ করার পরামর্শ দেয়নি।

ওদিকে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ না দেয়ার জন্য জার্মানিকে ‘হিপোক্রিসি’ বলে অভিযুক্ত করেছেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রিজ মেলনিক। গত মাসে জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখট বলেছেন, তারা ইউক্রেনে ৫ হাজার হেলমেট সরবরাহ দিচ্ছে। মেডিকেল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কিন্তু খুব চালাকি করে তারা বলেছে, কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র তারা দেবে না। কোনো অস্ত্র সরবরাহ দেবে না।

রোববার সাপ্তাহিক প্রার্থনা সভায় ইউক্রেনের জন্য নীরব প্রার্থনা করেছেন পোপ ফ্রাঁসিস। তিনি রাজনীতিকদের শান্তি খোঁজার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। ক্যাথলিক চার্চের প্রধান ভ্যাটিক্যান সিটিতে সেইন্ট পিটারস স্কয়ারে সমবেত কয়েক হাজার মানুষের সামনে বলেন, ইউক্রেন থেকে যে খবর পাচ্ছি তা ভয়াবহ।

লন্ডনে অবস্থানরত ইউক্রেনের নাগরিকরা দেশের এ পরিস্থিতিতে ভীতিকর অবস্থায় আছেন। তারা পারছেন না ঘুমাতে। আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাদেরকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ক সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)। এতে নিযুক্ত মার্কিন স্টাফরা পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা ডোনেটস্ক থেকে গাড়িতে করে দূরে সরে যাচ্ছেন। তবে মার্কিন স্টাফদের প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ওএসসিই।